বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষিত না হওয়ায় নেতৃত্বে দ্বিধা বিভক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: বিএনপি হাইকমান্ড দলীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়ার প্রেক্ষিতে ঘোষিত হয় নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আর এই কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে ক্রমেই পুরো নাটোরে বাড়তে থাকে গ্রুপিং, যা এখন দৃশ্যমান। গ্রুপিংয়ের কারণে নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন দ্বিধা বিভক্ত।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাদের বাধা নেই, সেই সব রাজনৈতিক দলে কোন গ্রুপিং না থাকায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তারা। তথ্যমতে, দীর্ঘদিন থেকেই নাটোর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। কেন্দ্রীয় বিএনপি বিগত আওয়ামী শাসনামলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে এমপি মনোনয়ন দেয় দুলু অথবা দুলু জেলে থাকাকালে তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে।

অপরদিকে, রুহুল কুদ্দুস দুলু কেন্দ্রীয় বিএনপির পদধারী হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ সময় নাটোর জেলা বিএনপি রুহুল কুদ্দুস দুলুর নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্তে নাটোরে সক্রিয় হন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কাশেম। মুলতঃ জাগদলের মধ্যদিয়ে আবুল কাশেমের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। সেই থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের একনিষ্ঠ সৈনিক। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আবুল কাশেমকে দেয়া হয় নাটোর জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব। জেলা রাজনীতিতে তার আবির্ভাব বিএনপির ক্ষুদ্র একটি মহল কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আবুল কাশেম তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পুরো নাটোর জেলায় শুরু করেন, লোক সমাগম, মতবিনিময়, কর্মী সভা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে আহার করা। যা জেলা জুড়ে এরমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।


এদিকে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে আবুল কাশেমকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ধরনের ঘোষণা আঁচ করতে পেরে রুহুল কুদ্দুস দুলু, তার সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি ও দুলু অনুসারীরা আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও নেতাকর্মীর মাঝে দ্বন্দ্ব ও হতাশা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীচু বাজার, উপর বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ফুলবাগান, মোহনপুর,দ্বিগাপাতিয়া, হাফরাস্তা, দত্তপাড়া, কান্দি ভিটা, কানাইখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নিজের মিটিং মিছিলে লোকসমাগম দেখে বুঝা উচিত, কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তার জনপ্রিয়তা! কোন মিটিং মিছিলে ৪/৫’শ লোকের বেশি হয়না। মিছিল তোলার লোক না থাকায়, তিনি নিজেই নিজের এবং ধানের শীষের শ্লোগান দিয়ে থাকেন। এমনকি তিনি নিজেই বলেন, দুলু ভাইয়ের মার্কা….!

ষ্টেশন বাজার, মাদ্রাসার মোড়, পিপরুল, মাধনগর, বড় হরিশপুরের একাধিক
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী জেলার তাহিরপুর ও বাঘমারার সিদ্দিক ও মন্টু রুহুল কুদ্দুস দুলুর জনসভায় লোক সাপ্লাইয়ের কাজ করে। কিন্তু ইদানিং নাকি টাকা দিয়েও সভায় লোকজন আনতে পারছেন না তারা।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ী বহর একবার নাটোর যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়। পরে ঐ ঘটনায় দোষীদের শাস্তিও দেয়া হয়। অন্যদিকে, সুকৌশলে দুলু ও তার সহযোগীরা মোঃ আবুল কাশেমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক নির্যাতন নিপীড়ন করে। ঢাকায় চিকিৎসা নিতে না পারায়, তাকে যেতে হয় সিঙ্গাপুর। মূলতঃ এরপর থেকে দলীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তে নাটোর বিএনপির রাজনীতীতে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার গাজীপুর বিএনপি এবং আমরা বিএনপি পরিবার সংগঠনের উপদেষ্টা হিসাবে। এ দায়িত্ব দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সাথে পালন করে, তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপি ছাড়াও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।

এসব কারণে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী শাসনামলের অবসানের পর গঠিত নাটোর জেলা বিএনপির কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আবুল কাশেমকে। এছাড়া ওই কমিটিতে লালপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলা থেকেও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি থেকে বাদ পরেন দুলুর ঘনিষ্ঠখ্যাত ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনসহ ঘনিষ্ঠ আরো কিছু নেতা। শুধু তাই নয়, ওই জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে।

এতে ছড়িয়ে পরে কিছুটা ক্ষোভ! কিন্তু কয়েক দিন যেতেই থেমে যায় ক্ষোভের আগুন। এসব কারণে রুহুল কুদ্দুস দুলু প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে আবুল কাশেমকে হত্যার হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে জেলা কমিটিতে নাম চলে আসায় এবং নাটোর জেলার দায়িত্ব পাওয়ায় রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছেন শিল্পপতি আবুল কাশেম। বিভিন্ন মিটিংয়ে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিলে, সবাইকে নিয়ে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন। এদিকে রুহুল কুদ্দুস দুলুও পাল্টা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ইঙ্গিত করেন। এতে বেকায়দায় পরে যায় জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।এক সময়ের বিএনপি ঘাঁটি খ্যাত নাটোর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯ জন। সচেতন মহলের দাবী, এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হলে নিঃসন্দেহে বিজয়ী হবে। আর যদি বিএনপির মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব বজায় থাকে তবে জামায়াত বা অন্য কোন দলের প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দাবী, এক সময় নাটোর সদর আসনে দুলুর কোন বিকল্প ছিল না।